টিবি হল টিউবরকোলোসিসের(যক্ষ্মার) সংক্ষিপ্ত রূপ যা সংক্রামক, বায়ুবাহিত রোগ যা ফুসফুসকে প্রভাবিত করে, মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের মতো শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলিতেও ছড়িয়ে যেতে পারে। যক্ষ্মায় (টিউবরকোলোসিসে) দেহের টিস্যুগুলির ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবরকোলোসিস নামে পরিচিত ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। টিউবরকোলোসিস বা যক্ষা সংক্রামক এবং কাশি, হাঁচি, হাসি ইত্যাদির মাধ্যমে, যা বাতাসে ছোট ছোট ফোঁটা ছেড়ে দেয়, একজনের থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে; তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য যদি কোনো সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে খুব ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ না রাখা হয় তাহলে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়া অতটা সহজ নয়। এবং তাই, যক্ষ্মা পরিবারের সদস্য, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সহকর্মী বা অন্য কোনও ব্যক্তি যার সাথে দীর্ঘকাল ধরে বন্ধ জায়গায় স্থায়ীভাবে থাকার ফলে ভাইরাসটি একে অপরের থেকে অন্যের কাছে সংক্রামিত হতে সক্ষম হয়।
যক্ষ্মা মূলত দুই প্রকার, যেমনটি নীচে উল্লেখিত:
(লেটেন্ট টেউবরকোলোসিস)প্রচ্ছন্ন যক্ষ্মা: যক্ষ্মার এই প্রকারে রোগের ছড়িয়ে পড়ার শৈলী সুপ্ত আকারে হয়, যেখানে ভাইরাসটি যে ব্যক্তির শরীরে উপস্থিত থাকে সেই শরীরের ভাইরাস বৃদ্ধির প্রতিরোধ ব্যবস্থার দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। এটি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও হ্রাস করে। তবে যদি কোনও কারণে ভাইরাসজনিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা আপোষিত হয়, তাহলে ব্যক্তির সংক্রমিত ভাইরাস যে কোনও সময় সক্রিয় হতে পারে।
(আ্যকটিভ টিউবরকোলোসিস)সক্রিয় যক্ষ্মা: এটি যক্ষ্মার একটি রূপ যেখানে দেহে উপস্থিত যক্ষ্মার জীবাণুগুলি শরীরটাকে প্রভাবিত করে এবং দ্রুতগতিতে বহুগুণ তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। টিবির এই আকারটি সাধারণত সুপ্ত যক্ষ্মার পুনঃসবেশন এবং অত্যন্ত সংক্রামক।
অ্যাক্টিভ যক্ষ্মা একটি খুব মারাত্মক রোগ যা যত্ন সহকারে চিকিত্সা করা প্রয়োজনীয়। প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং কার্যকর চিকিত্সা এই সমস্যার প্রভাব হ্রাস করতে পারে; অন্যথায় চিকিত্সায় বিলম্বতা রোগীর মৃত্যুর কারণও হতে পারে। সুতরাং, রোগ সনাক্তকরণে এবং সময়মতো চিকিত্সীয় সহায়তা উপলব্ধ করানোর জন্য যক্ষ্মার লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুব প্রয়োজন। এটা ছাড়া, সুপ্ত যক্ষার যেহেতু কোনও লক্ষণ সাধারণত দেখা যায় না, কারণ, শরীরে ভাইরাস সুপ্ত রয়েছে; এটি কেবলমাত্র রক্ত বা ত্বকের পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করা যেতে পারে।
(আ্যকটিভ টিউবরকোলোসিস)সক্রিয় যক্ষ্মার লক্ষণ
সক্রিয় যক্ষ্মার কিছু সাধারণ লক্ষণগুলির নীচের তালিকাটির মধ্যে রয়েছে, তবে এটি বলা বাহুল্য যে লক্ষণগুলি তালিকাটিতে সীমাবদ্ধ নয়:
- ৩ সপ্তাহ ধরে স্থায়ী ঘন কাশি
- বক্ষস্থলে তীব্র ব্যথা
- নিশ্বাস নিতে গিয়ে ব্যথা বা কাশি
- কাশিতে রক্ত
- চিরস্থায়ী পরিশ্রান্তি ও ক্লান্তি
- রাত্রে ঘামা
- মারাত্মক ঠান্ডা লাগা
- ধারাবাহিক ভাবে অল্প-স্বল্প জ্বর আসা
- ক্ষিদে না পাওয়া
- বিনা কারণে ওজন হ্রাস
যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি, সংক্রমণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে যে ওপরের লক্ষগুলির কিছু বা সকল লক্ষণই প্রদর্শিত হতে পারে। এছাড়াও, যদি সংক্রমণটি দেহের অন্য কোনও অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, তার লক্ষণগুলি পৃথক হয় এবং লক্ষণগুলি সংশ্লিষ্ট অঙ্গের উপর নির্ভর করে, যেমন মেরুদণ্ডে যদি যক্ষ্মা ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে ব্যক্তি পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারে, যদি ব্যক্তির সংক্রমণ কিডনিতে হয়, তাহলে ব্যক্তির প্রস্রাবে রক্ত খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এই লক্ষণগুলি পৃথকভাবে বা উপরের সাধারণ লক্ষণের সাথে একত্রিত হয়েও দেখা দিতে পারে।
যক্ষ্মার সংক্রমণটি খুব ছোঁয়াচে হওয়া সত্ত্বেও, তারা কোনো বস্তু বা স্থানের পৃষ্ঠের উপরে প্রস্ফুটিত হয় না এবং তাই, আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাত মিলানো বা খাবার ভাগাভাগির মতো সাধারণ ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকলেই ভাইরাসটি অন্য একজনের কাছে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সূত্রে, লোকজন যাদের এই রোগের ভাইরাসে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি হয়ে দাড়ায়, তারা হলেন:
- পরিবারেরে সদস্য
- ঘনিষ্ট বন্ধুগণ
- সহকর্মীগণ
- লোকজন যারা যক্ষ্মা আক্রান্ত অঞ্চলে যেমন রাশিয়া, এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, ইত্যাদি জায়গায় ঘুরেছেন
- লোকজন যারা বহুদিন হাসপাতালে বা নার্সিং হোমে থেকেছেন
এছাড়াও, দুর্বল বা আপোষিত প্রতিরোধ ব্যবস্থার মানুষের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। মানুষজন যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষীণ, তারা হলেন:
- বাচ্চা এবং শিশু – যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা এখনও বিকাশিত হয়নি
- লোকজন যাদের ডায়বেটিস বা কিডনির সমস্যা দেখা যায়
- এইচ আই ভি/এড্সের রোগী
- অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হওয়া রোগী
- ক্যান্সারের রোগী
- স্ব-প্রতিরোধ ক্ষমতাচ্যুত লোকজন
- অপুষ্ট বা কম ওজনের মানুষ
- যারা ক্রমাগত সিগারেট খায়
- যারা নেশা করে (মদ বা ড্রাগ্স)
বক্ষস্থলে যক্ষ্মার ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ, প্রতীক ও চিকিত্সা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যক্ষ্মা যদি তাড়াতাড়ি সনাক্ত না করা হয় তবে তা মারাত্মক প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু, যদি সঠিক সময়ে নির্ণয় করা হয় এবং উপযুক্ত চিকিত্সা প্রদান করা হয়, তাহলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য। যদি কোনও ব্যক্তি উপরের কোনও লক্ষণগুলি অনুভব করেন তাহলে তার তৎক্ষণাত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ধারণের জন্য পরীক্ষা করানো উচিত। বক্ষস্থলে যক্ষ্মার প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করার জন্য, ডাক্তারেরা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের পরামর্শ দেন যা রোগীদের ধর্মীয়ভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন; যদি সংক্রমণটি ‘ড্রাগ-প্রতিরোধী’ হয় তবে শক্তিশালী ওষুধের সাথে জড়িত একটি আলাদা চিকিৎসা প্রণালী শুরু করার দরকার। একবার চিকিৎসা পেরণালী শেষ হয়ে গেলে, চিকিৎসক একটি ছাড়পত্র সরবরাহ করেন, যাতে জানানো হয় যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আর সংক্রামিত নয় এবং ভাইরাসটি অন্য কোনও ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে পড়ার কোনও ঝুঁকি নেই। এই প্রণালীর পরেই কোনও ব্যক্তিকে যক্ষ্মার থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিরাময় এবং নিরাপদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
যক্ষ্মা রোগটিকে অতীতের কোনও রোগ বলে মনে হতে পারে কিন্তু তা আজও খুব বিদ্যমান এবং তাই কোনও ক্ষতিকারক জটিল প্রভাব এড়ানোর জন্য সময়মতো সংক্রমণ সনাক্ত এবং চিকিত্সা করা যায় তা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ যত্ন এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।